বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫

বেঙ্গালুরুতে আরসিবি’র আইপিএল বিজয় উৎসবে পদদলিত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু: কর্ণাটক সরকার দায়ী করল ফ্র্যাঞ্চাইজি, ক্রিকেট সংস্থা ও কোহলিকে


ভারতের বেঙ্গালুরুতে গত ৪ জুন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)-এর আইপিএল শিরোপা বিজয় উৎসবের সময় পদদলিত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু ও অর্ধশতাধিক আহতের ঘটনায় কর্ণাটক সরকার ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ, কর্ণাটক রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা (কেএসসিএ) এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ডিএনএ এন্টারটেইনমেন্ট নেটওয়ার্কসকে দায়ী করেছে। এমনকি দলের প্রধান তারকা বিরাট কোহলিরও দায় দেখছে সরকার।

এই ঘটনায় চলা মামলায় কর্ণাটক হাইকোর্টের নির্দেশে সরকার একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরসিবি পুলিশের অনুমতি ছাড়াই ‘ভিক্টরি প্যারেড’ ও স্টেডিয়ামে উৎসবের আয়োজন করে, যা অব্যবস্থাপনার কারণে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনে। প্রমাণ হিসেবে কোহলির একটি ভিডিও বার্তার উল্লেখ করা হয়েছে, যা পরে আরসিবি’র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পেজ থেকে মুছে ফেলা হয়।

ঘটনার দিন সকাল ৭:০১টায় আরসিবি’র অফিসিয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা হয় যে, বিধান সৌধ থেকে এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম পর্যন্ত ‘ভিক্টরি প্যারেড’ হবে এবং এটি বিনামূল্যে সবার জন্য উন্মুক্ত। সকাল ৮:৫৫টায় কোহলির একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়, যেখানে তিনি ভক্তদের বেঙ্গালুরুতে উৎসবে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। বিকেল ৩:১৪টায় আরেকটি পোস্টে বলা হয়, সীমিত ফ্রি পাস পাওয়া যাবে। কিন্তু ততক্ষণে প্রায় ৩ লাখ মানুষ স্টেডিয়ামের আশপাশে জড়ো হয়ে যায়, যা স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা (৩৫,০০০) ছাড়িয়ে যায়। এই পোস্টগুলোর মধ্যে একটি ১৬ লাখ বার দেখা হয়, যা জনসমাগমকে ব্যাপকভাবে উসকে দেয়। ১৮ বছরের আইপিএল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে আরসিবি। ৩ জুন আহমেদাবাদে পাঞ্জাব কিংসকে ৬ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। পরদিন দলটি ট্রফি নিয়ে বেঙ্গালুরুতে ফিরে বিধান সৌধ থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত প্যারেড করে। কিন্তু এই উৎসবের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি বা অনুমতি না থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কর্ণাটক সরকার জানিয়েছে, ৩ জুন সন্ধ্যায় কেএসসিএ’র প্রধান নির্বাহী পুলিশকে সম্ভাব্য প্যারেডের বিষয়ে অবহিত করলেও, কোনো আনুষ্ঠানিক অনুমতির আবেদন করা হয়নি। পুলিশ স্বল্প সময়ের নোটিশ ও জনসমাগমের বিস্তারিত তথ্য না থাকায় অনুমতি প্রত্যাখ্যান করে। তবুও আরসিবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালিয়ে যায়, যা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। ঘটনার দিন পুলিশ ভিড় নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খায় এবং লাঠিচার্জে বাধ্য হয়। এই হুড়োহুড়িতে গেট নম্বর ২, ২এ, ৭, ১৮ ও ২০-এ পদদলিত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু এবং ৭১ জন আহত হন। স্টেডিয়ামে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা না থাকায় আহতদের চিকিৎসায় বিলম্ব হয়। কর্ণাটক সরকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরসিবি, ডিএনএ এন্টারটেইনমেন্ট এবং কেএসসিএ ২০০৯ সালের ‘লাইসেন্সিং অ্যান্ড কন্ট্রোলিং অফ অ্যাসেম্বলিজ অ্যান্ড প্রসেশনস’ আইন মেনে কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দেয়নি। ফলে পুলিশের পক্ষে ভিড় ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় আরসিবি’র বিপণনপ্রধান নিখিল সোসালে এবং ডিএনএ’র তিন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেএসসিএ’র সেক্রেটারি এ শঙ্কর এবং ট্রেজারার ইএস জয়রাম পদত্যাগ করেছেন। কর্ণাটক সরকার পাঁচ জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করেছে এবং বিচারপতি মাইকেল ডি’কুনহার নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। আরসিবি প্রতিটি মৃতের পরিবারের জন্য ১০ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের জন্য ‘আরসিবি কেয়ার্স’ তহবিল ঘোষণা করেছে। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজির মূল কোম্পানি ডায়াজিও এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) আরসিবি’কে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। কর্ণাটক হাইকোর্ট এ ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করে সরকারকে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়। আদালত আগামী শুনানিতে সব পক্ষের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইবে।
এই ঘটনায় ভারতের বিভিন্ন মহল থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সচিন তেন্ডুলকর, অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রমুখ দুঃখ প্রকাশ করে নিরাপদ উৎসবের ওপর জোর দিয়েছেন। তদন্ত কমিশন ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে উপযুক্ত স্থানে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও জনসমাগম ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দিয়েছে।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.