ইসরাইলের নৃশংস আক্রমণে গাজা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কমপক্ষে ৬০,০৩৪ জন নিহত এবং ১,৪৫,৮৭০ জন আহত হয়েছেন। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ, মাহার শিক্ষার্থী, সতীর্থ ফুটবলার এবং বন্ধু-বান্ধবের প্রাণহানি ঘটছে। তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করা মাহা বলেন, “গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। গাজাবাসীর আত্মদান ও কান্না আমরা কোনোদিন উপেক্ষা করতে পারব না।”
ইউএন-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানায়, গাজার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ কয়েক দিন ধরে খাবার ছাড়া রয়েছে, এবং প্রায় ১,০০,০০০ নারী ও শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। খাদ্য ও পানির তীব্র অভাবে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া এবং হামের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে, যা শিশুদের জন্য মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে কমপক্ষে ১৫৪ জন, যার মধ্যে ৮৯ জন শিশু, অনাহার ও অপুষ্টির কারণে মারা গেছে।
ইসরাইলের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং ত্রাণ বিতরণে বাধার কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। মার্চ থেকে মে ২০২৫ পর্যন্ত ইসরাইল ত্রাণ প্রবেশে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। বর্তমানে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামে একটি ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বেসরকারি সংস্থা ত্রাণ বিতরণ করছে, যা জাতিসংঘের পূর্ববর্তী ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করেছে। তবে, এই ব্যবস্থা অমানবিক এবং সামরিকীকৃত বলে সমালোচিত হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর জানায়, মে মাস থেকে জিএইচএফ সাইটগুলোর কাছে খাদ্যের জন্য অপেক্ষারত প্রায় ১,০০০ ফিলিস্তিনি ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন।
মাহা মোহাম্মদ শাবাত গাজার এই মানবিক সংকটের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ত্রাণ ও খাদ্য সরবরাহের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও বলেছেন, “গাজায় ত্রাণের ফোঁটা ফোঁটা প্রবাহকে একটি স্রোতে পরিণত করতে হবে।” তবে, ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত হামলা এবং ত্রাণ বিতরণে বাধার কারণে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।
গাজার শিশুদের কঙ্কালসার দেহ আর মাহার মতো তৃণমূল কর্মীদের আকুতি বিশ্ববাসীর কাছে একটি জাগরণের ডাক। মানবতার এই সংকটে নীরব থাকার কোনো অজুহাত নেই।