ঢাকা, ১৫ জুলাই ২০২৫: বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসানের জাতীয় দলে ফেরার প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে থাকলেও তিনি নিজে এ বিষয়ে নীরব রয়েছেন। সম্প্রতি প্রথম আলোর এক সাক্ষাৎকারে তাঁর জাতীয় দলে ফেরা, নির্বাচকদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং শারীরিক-মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে তিনটি প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। এমনকি ‘নো কমেন্ট’ বলার পরিবর্তেও দীর্ঘ নীরবতা পালন করেছেন তিনি। এ থেকে স্পষ্ট, রাজনৈতিক কারণে ‘দেশান্তরি’ এই অলরাউন্ডার বিতর্কের জালে আর জড়াতে চান না।বর্তমানে গায়ানায় গ্লোবাল সুপার লিগে (জিএসএল) দুবাই ক্যাপিটালসের হয়ে খেলছেন সাকিব। উদ্বোধনী ম্যাচে ৩৭ বলে ৫৮ রান ও ১৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে আলোচনায় এসেছেন তিনি। এরপরই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে তাঁর জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেছেন, তিনি সাকিবের সঙ্গে কথা বলবেন। এর আগে বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমান মিঠু একাধিকবার বলেছেন, “সাকিবের জন্য জাতীয় দলের দরজা সব সময় খোলা।”
তবে, সাকিবের বিরুদ্ধে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে হত্যা মামলা, শেয়ার কেলেঙ্কারি ও দুদকের মামলাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। এসব কারণে তিনি প্রায় এক বছর ধরে দেশে ফিরতে পারছেন না। ফলে, আইনের চোখে ‘অভিযুক্ত’ এই ক্রিকেটারকে জাতীয় দলে ফেরানো নিয়ে নৈতিক প্রশ্ন উঠেছে। প্রথম আলোর সূত্র জানিয়েছে, সাকিবের সঙ্গে তাঁর জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয়নি। এমনকি সম্প্রতি সাকিব বিসিবি সভাপতিকে ফোন করলেও তিনি সেই ফোন রিসিভ করেননি।
বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের সময় থেকেই স্পষ্ট করা হয়েছিল, সাকিবের জাতীয় দলে ফেরার পথে বোর্ডের কোনো বাধা নেই। তবে, আইনি জটিলতা মিটিয়ে আসতে হবে সাকিবকেই। রাষ্ট্র যদি বিশেষ ব্যবস্থায় তাঁকে দায়মুক্তি না দেয়, তবে তাঁর জাতীয় দলে ফেরা সম্ভব নয়, এমনকি নৈতিকভাবেও তা উচিত নয়।
ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও সাকিবের ফেরা সহজ নয়। ৩৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার প্রায় এক বছর ধরে দেশের ক্রিকেট থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। তাঁর ফিটনেস ও ফর্ম সম্পর্কে নির্বাচকদের কাছে স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। গ্লোবাল সুপার লিগে তাঁর খেলা দেখে শুধু টেলিভিশনের মাধ্যমে দলে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এছাড়া, দীর্ঘ বিরতির পর দলের সঙ্গে অনুশীলন ও অভিযোজন ছাড়া তাঁর ফেরা কঠিন।
সাকিবের জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে চলমান আলোচনাকে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর ভক্তদের ‘ঠান্ডা’ রাখার কৌশল হিসেবে দেখছেন। বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক অধারাবাহিক পারফরম্যান্স এবং আসন্ন বিসিবি নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এই আলোচনাকে কেউ কেউ জনপ্রিয়তা অর্জনের প্রচেষ্টা বলেও মনে করছেন।[]
গায়ানায় প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাকিব বাংলাদেশ দলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিশ্লেষণ দিয়েছেন। শ্রীলঙ্কা সফরে দলের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে ব্যাটিংয়ের উন্নতির পথরেখা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ দল খুব ভালো দল হয়ে উঠবে। তবে নিজের ফেরা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি, বরং সতর্কভাবে এই আলোচনা থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন।
সাকিবের বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগের বিষয়টি মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত তাঁর জাতীয় দলে ফেরা কেবল আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তিনি নিজেও এই বিতর্কের অংশ হতে চান না বলে স্পষ্ট করেছেন।