মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫

সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের অপরাজিত শিরোপা জয়, মিলি আক্তারের হাতে সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার

 ধাকায় বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় সোমবার (২১ জুলাই ২০২৫) সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ম্যাচে নেপালকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। এই টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য গোলরক্ষক মিলি আক্তার জিতেছেন সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার। তার এই অসাধারণ সাফল্যে আনন্দে মেতে উঠেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বারইগ্রাম।

মিলির বাড়ি নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের বারইগ্রামে। তার বাবা সামছুল হক একজন কলা বিক্রেতা। ম্যাচ চলাকালীন মিলির খেলা দেখতে টিভির সামনে উপচে পড়া ভিড় জমেছিল। মিলি যখনই বল তালুবন্দি করতেন, তখনই দর্শকদের চিতকারে মুখরিত হয়ে উঠত বারইগ্রাম। সামছুল হকের কলা বিক্রির চৌরাস্তায় জমে উঠেছিল উতসবমুখর পরিবেশ। মিলির কেনা এলইডি টিভিতে তার মা আনোয়ারা বেগম, ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজন একত্রে খেলা উপভোগ করেন। ম্যাচ শেষে মিলি সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার গ্রহণ করলে গ্রামে পটকা ফাটিয়ে ও মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ উদযাপন করা হয়।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই ২০২৫) দুপুরে মিলির গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে তার বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজন মিলির সাফল্য নিয়ে আলোচনা করছেন। ভালোমন্দ রান্নার প্রস্তুতি চলছে। মিলির মা আনোয়ারা বেগম বলেন, “আমি তো বুঝতে পারছি না মিলি কিভাবে এত গোল ফিরাল। একটা গোলও খাইল না। এতে আমার বুকটা ভইর‌্যা গেছে। যহন দেখলাম তার হাতে পুরস্কারটা, তহন আনন্দে কাইন্দ্যা দিছি।”

মিলির বাবা সামছুল হক জানান, মিলির ফুটবল খেলা নিয়ে অনেকে নানা সমালোচনা করতেন। তিনি বলেন, “আমি ছোটবেলায় বল খেলতাম, তয় আমার ছেড়ির মতন অতো ভালা খেলতাম না। এই খেলা লইয়া কতজনে যে কত আজে-বাজে কথা কইছে, অহন তারার মুহে ছাই দিছি। আমি চাই মিলি দেশের লাইগ্যা আরো সম্মান আনুক। যহন ছেড়িডা জিত্যাইলছে, তহনি বেহেরেই মাগনা কলা খাওয়াইছি।”

স্থানীয় সাংবাদিক এনামুল হক বাবুল বলেন, “অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন আমাদের মিলি। ২১শে পদক পাওয়ার পর এখন আরেকটা সফলতা—এটা নান্দাইলবাসীর জন্য অনেক গর্বের। এটা এলাকার ও নান্দাইলের জন্য বড় পাওনা। একটা ইতিহাস হয়ে থাকবে।”

মিলির শৈশবের কোচ মো. দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল বলেন, “আমি যে কী খুশি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।” নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার জানিয়েছেন, মিলি গ্রামে ফিরলে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “আমাদের মিলি দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক ছাড়াও সেরা হয়েছে, তা অনেক বড় পাওনা। দেশের ইতিহাসে নান্দাইলের মিলিও ইতিহাস হয়ে থাকবে।”

এছাড়া, নান্দাইলের শেরপুর গ্রামের আরেক খেলোয়াড় শিখা আক্তার বাংলাদেশের হয়ে খেলে দুটি গোল করেছেন, যা দলের শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.