রবিবার, ৬ জুলাই, ২০২৫

হাতিরঝিলে আলোর উৎসবে নারী ফুটবল দলের সংবর্ধনা: পুরস্কারের আলো কোথায়?

 

ঢাকা, ০৭ জুলাই ২০২৫: গভীর রাতে হাতিরঝিলের অ্যাম্ফিথিয়েটারে আলো আর হাততালির মাঝে জমকালো সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে। প্রথমবারের মতো এএফসি এশিয়ান কাপে জায়গা নিশ্চিত করে মিয়ানমার জয়ের পর গতকাল দিবাগত রাত দেড়টায় দেশে ফিরেছেন এই বীরাঙ্গনারা। রাত তিনটায় তাঁদের বরণ করা হয় ফুলের তোড়া আর উষ্ণ অভিনন্দনে।

ঘুমন্ত ঢাকা শহর যেন জেগে উঠেছিল এই আনন্দে। হাতিরঝিলের মঞ্চে একে একে উঠে আসেন রুপণা চাকমা, শিউলি, শামসুন্নাহার, আফঈদা, তহুরা, কোহাতি, মনিকা, মারিয়া, ঋতুপর্ণাসহ দলের খেলোয়াড়েরা। ক্লান্ত মুখে তাঁদের চোখে ছিল সাহস, ঠোঁটে হাসি। যেন বলছিলেন, ‘আমরা বিজয় নিয়ে ফিরেছি, তবে এখনো পথ বাকি।’

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের আয়োজনে হাতিরঝিলের মঞ্চ সাজানো হয়েছিল বর্ণিল ব্যানার, বিলবোর্ড ও ডিজিটাল আলোয়। বড় পর্দায় দেখানো হয় মিয়ানমার ম্যাচের উজ্জ্বল মুহূর্তগুলো—ঋতুপর্ণার গোল, রুপণার দুর্দান্ত সেভ। হাজারখানেক দর্শকের ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে মুখরিত হয় রাতের হাতিরঝিল। তবে এই উৎসবের মাঝে একটি শূন্যতা চোখে পড়ল—কোনো অর্থ পুরস্কার বা প্রতীকী চেকের ঘোষণা এল না। আলো আর অভিনন্দনই যেন হয়ে উঠেছিল স্বীকৃতির একমাত্র প্রতীক। বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল তাঁর বক্তব্যে মেয়েদের প্রশংসা করে বলেন, “আপনারা ইতিহাস লিখছেন এবং সমাজের মনোভাব বদলাচ্ছেন। আমরা সবসময় আপনাদের পাশে ছিলাম, থাকব।” তবে দর্শকদের প্রত্যাশিত কোনো পুরস্কারের ঘোষণা না আসায় অনেকেই হতাশ হন। তাবিথ ২০২৬ এশিয়ান কাপ নিয়ে ‘মিশন অস্ট্রেলিয়া’র স্বপ্নের কথা বললেন, কিন্তু লিগ আয়োজন বা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিষয়ে কোনো কথা উঠল না। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ঋতুপর্ণার দৃপ্ত বক্তব্যের প্রশংসা করে বলেন, “আপনারা জানেন কীভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লড়াই করতে হয়। বাংলাদেশ আপনাদের জন্য গর্বিত।” ঋতুপর্ণা বলেন, “আমাদের এই সাফল্য টিমওয়ার্কের ফল। আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যেতে চাই। আপনারা আমাদের ওপর ভরসা রাখবেন।” কোচ পিটার বাটলার বাংলায় ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে শুরু করেন এবং মেয়েদের পরিশ্রমের প্রশংসা করেন। সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকও পেশাদার পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তবে সংবর্ধনার আড়ম্বরের মাঝে একটি প্রশ্ন অমীমাংসিত রয়ে গেল—শুধু ফুলের তোড়া আর প্রশংসাই কি যথেষ্ট? গত বছর সাফ জয়ের পর দেড় কোটি টাকা বোনাসের প্রতিশ্রুতি এখনো পূরণ হয়নি। এবারও কোনো ঘোষণা না আসায় হতাশা আরও গাঢ় হয়েছে। নারী ফুটবলের জন্য ঘরোয়া লিগ বা প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টের অভাব রয়েছে। সর্বশেষ লিগ হয়েছিল গত বছর মে মাসে। এরপর কোনো আয়োজন নেই। অথচ এই মেয়েরা দক্ষিণ এশিয়া পেরিয়ে এশিয়ার দরজা খুলেছেন। তাঁদের পথ মজবুত করতে এখন বাফুফের কাছে প্রয়োজনীয় সমর্থন ও পরিকল্পনার দাবি উঠেছে।
অনুষ্ঠান শেষে ঋতু আর মনিকা ভুটানে লিগ খেলতে রওনা দেন। বিজয়ের উৎসব শেষে আবার লড়াই। এই রাত ক্লান্তির নয়, আত্মসম্মান আর অঙ্গীকারের। রুপণা, ঋতু, আফঈদারা প্রমাণ করেছেন—বাংলাদেশ শুধু ‘বন্যার দেশ’ নয়, এখন ‘ফুটবলের দেশ’ও। তাঁদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.