জাতীয় নারী হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতায় মাঠে লড়ছেন, আর ফাঁকে ফাঁকে সাইডলাইনে সতীর্থের কোলে থাকা ১১ মাসের ছেলে তাওহিদুল কবিরের দিকে তাকাচ্ছেন তানজিমা আক্তার। ম্যাচ শেষ হতেই ছুটে গিয়ে ছেলেকে কোলে তুলে আদরে ভরিয়ে দেন তিনি। মাঠে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আর মাঠের বাইরে মমতাময়ী মায়ের ভূমিকায় তানজিমা সত্যিই অনেক নারী খেলোয়াড়ের জন্য অনুপ্রেরণা।
শনিবার থেকে শুরু হওয়া জাতীয় নারী হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পুলিশ দলের হয়ে খেলছেন কুমিল্লার মেয়ে তানজিমা। ২০১৭ সালে পুলিশে চাকরি পেলেও হ্যান্ডবল খেলা শুরু করেন ২০২০ সাল থেকে। বর্তমানে তিনি পুলিশ দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তার স্বামী তানভীর আহমেদও পুলিশে কর্মরত। দুজনেই ঢাকায় থাকায় ছেলেকে রেখে খেলাধুলা করতে সুবিধা হয়েছে তানজিমার।
রোববার কুষ্টিয়ার বিপক্ষে জয়ের পর তানজিমা বলেন, “মাঝে মাঝে বাবুকে রেখে খেলতে কষ্ট হয়। তারপরও সব মিলিয়ে মানিয়ে নিচ্ছি। ট্রেনিংয়ের সময় ছেলেকে ওর বাবা রাখেন। এছাড়া আমার আত্মীয়-স্বজনও ছেলেকে দেখাশোনা করেন।”
মাঠে খেলার সময় তানজিমা চেষ্টা করেন ছেলেকে বুকের দুধ কম খাওয়াতে। তিনি বলেন, “খেলতে এলে ছেলেকে বুকের দুধ না দেওয়ার চেষ্টা করি। তখন ওকে ভাত খাওয়াই। আমার ছেলে একটু চঞ্চল, অন্যদের সঙ্গে দুষ্টুমি করে। আমার সতীর্থদের সবাইকে ও চিনে ফেলেছে, তাই সবার কাছে হাসিমুখে থাকে।”
মাঠের খেলার পাশাপাশি মাঠের বাইরেও ডিউটি করতে হয় তানজিমাকে। ছাত্রদের আন্দোলন, রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তানজিমার কথায়, “বেশি ডিউটি থাকলে খেলা বন্ধ করে ডিউটিতে যেতে হয়। মিছিল, আন্দোলনে সব ধরনের ডিউটি করতে হয়েছে।”
পুলিশের আন্তঃবাহিনী হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতায় নিয়মিত খেলেন তানজিমা। এখনো জাতীয় দলে ডাক পাননি, তবে সুযোগ পেলে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দিতে চান। তিনি বলেন, “অন্য সবার মতো আমারও স্বপ্ন জাতীয় দলে খেলা। তবে ছেলে আরেকটু বড় হলে তবেই ক্যাম্পে যাব।”
একজন অলরাউন্ডার হিসেবে তানজিমা ঘরকন্না, পুলিশের চাকরি, খেলার মাঠে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং মাঠের বাইরে মায়ের দায়িত্ব পালন করছেন। লড়াকু এই মা অনেক নারী খেলোয়াড়ের জন্য অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।