মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

হকি লিগের ‘ঈদের চাঁদ’ কবে উঠবে? খেলোয়াড় ও ক্লাবগুলোর অপেক্ষার প্রহর

 দেড় বছর ধরে দেশের হকি খেলোয়াড়েরা একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন—কবে শুরু হবে হকি লিগ? এ সময় তাঁরা একাধিকবার ঈদের চাঁদ দেখলেও হকি লিগের ‘চাঁদ’ দেখা হয়নি। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) রিয়াজুল হাসানও এ প্রশ্নের উত্তর জানেন না। অসহায়ের মতো তিনি বলেন, “ক্লাবগুলো যদি এগিয়ে না আসে, তাহলে খেলা কীভাবে হবে?”

গত বছরের নভেম্বরে সরকার হকি ফেডারেশনের জন্য অ্যাডহক কমিটি গঠন করে। কিন্তু নয় মাসে মাত্র দুটি ঘরোয়া টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়েছে—ছেলেদের বিজয় দিবস হকি ও মেয়েদের ডেভেলপমেন্ট কাপ। বর্তমানে ফেডারেশনের মূল ব্যস্ততা নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠেয় জুনিয়র হকি বিশ্বকাপ নিয়ে, যার বাজেট প্রায় সোয়া চার কোটি টাকা। গত মাসে ক্লাবগুলোর সঙ্গে সভা করলেও লিগ চালু নিয়ে কোনো ফলপ্রসূ আলোচনা হয়নি।

রিয়াজুল হাসান বলেন, “প্রিমিয়ার লিগের আগে প্রথম বিভাগ হকি হওয়ার কথা। ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছি, তারা সময় চেয়েছে। তাদের নাকি টাকাপয়সা নেই।” দেশে মোট ৩২টি ক্লাবের মধ্যে প্রথম বিভাগের ক্লাব ১১টি। আগস্টের সভায় ১০টি ক্লাবের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রভাবে ক্লাবগুলোর পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলো মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ফলে ক্লাবগুলো ফেডারেশনের কাছে আর্থিক অনুদান চেয়েছে।

ওয়ারী ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা অর্থসংকটে আছি। ফেডারেশনকে আর্থিক অনুদানের কথা বলেছি। বাকিটা ভর্তুকি দিয়ে চালিয়ে নেব। কিন্তু ফেডারেশন কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি। তা ছাড়া ফেডারেশনে ক্লাবগুলোর কোনো প্রতিনিধি নেই। তাহলে কীভাবে লিগ করব?” ঢাকা ইউনাইটেড ও কম্বাইন্ড ক্লাবের সভাপতি সাজেদ আদেল বলেন, “ফেডারেশন আমাদের লিগে খেলতে রাজি কি না জানতে চেয়েছে। আমরা সবাই রাজি। কিন্তু ফেডারেশনের সভাপতির সঙ্গে দেখা করার কথা বললে সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি আমাদের নিরুৎসাহিত করেছেন।”

ক্রিকেট ও ফুটবলের পাশাপাশি হকি দেশের অন্যতম প্রধান খেলা। কিন্তু ক্রিকেট ও ফুটবলে নিয়মিত লিগ হলেও হকিতে তা নেই। ১৯৯৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২৬ বছরে প্রিমিয়ার হকি লিগ মাত্র ১৩ বার হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে লিগ শেষ না হওয়ায় আবাহনী ও মেরিনার্সকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। প্রথম বিভাগ লিগ ২৬ বছরে ১২ বার এবং দ্বিতীয় বিভাগ লিগ ২০১২ সাল থেকে মাত্র ৫ বার হয়েছে।

লিগের অনিয়মিত আয়োজন খেলোয়াড়দের জীবিকার ওপর প্রভাব ফেলছে। স্ট্রাইকার পুষ্কর খীসা বলেন, “লিগ না হলে আমাদের চলাই কষ্টকর। ফেডারেশন থেকে তেমন কিছু পাই না। লিগে খেলে যা আয় হয়, তা দিয়েই চলি। লিগ শুরু হলে ভালো হতো।” জাতীয় দলের খেলোয়াড় নাঈম উদ্দিন বলেন, “লিগ আমাদের কাছে ঈদের চাঁদের মতো। নিয়মিত লিগ না হলে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেও ভালো করা কঠিন।”

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক কোচ ও খেলোয়াড় প্রতাপ শংকর হাজরা বলেন, “লিগ না হলে দক্ষ খেলোয়াড় আসবে কোথা থেকে? বাংলাদেশের হকিতে এখন শুধু বিকেএসপির ওপর ভরসা।” আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ নিয়মিত অংশ নিলেও ঘরোয়া আয়োজনের অভাবে দক্ষ খেলোয়াড় তৈরি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.