রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫

টেস্ট ক্রিকেটে বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা: সীমিত হতে পারে টেস্ট খেলুড়ে দেশের সংখ্যা

সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আইসিসির বার্ষিক সাধারণ সভায় ক্রিকেটের ঐতিহ্যবাহী ফরম্যাট টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠে এসেছে যুগান্তকারী প্রস্তাব। সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৭ সালের পর টেস্ট খেলুড়ে দেশের সংখ্যা সীমিত করার পরিকল্পনা বিবেচনা করছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। এছাড়াও, বহু প্রতীক্ষিত টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফিরছে এবং অলিম্পিকে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্তির জন্য বাছাই পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

টেস্ট ক্রিকেটের সংকট ও সীমিতকরণ প্রস্তাব
টেস্ট ক্রিকেট, যা ক্রিকেটের সবচেয়ে  টিস্ট ফরম্যাটটি আর্থিকভাবে কয়েকটি দেশের পক্ষে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। সম্প্রচার আয়, দর্শক আগ্রহের অভাব এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক ক্রিকেট বোর্ডের জন্য টেস্ট ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়া ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আইসিসি ২০২৭ সালের পরবর্তী বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (ডব্লিউটিসি) চক্রের জন্য টেস্ট খেলুড়ে দেশের সংখ্যা সীমিত করার প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সিইও টড গ্রিনবার্গ, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের সিইও রিচার্ড গোল্ড এবং আইসিসির নতুন প্রধান নির্বাহী সঞ্জোগ গুপ্ত। এই গ্রুপ ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ তাদের সুপারিশ উপস্থাপন করবে।

আইসিসির প্রধান নির্বাহী সঞ্জোগ গুপ্ত বলেছেন, “আপনাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি এমন একটি পণ্য বারবার পরিবেশন করা হয় যা কেউ চায় না, তাহলে সেই পণ্য ধ্বংস হবে, এবং তার চারপাশের পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঠিক যেমন ব্ল্যাকবেরি ফোন হারিয়ে গেছে, টেস্ট ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও তেমনটি হতে পারে।” এই মন্তব্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে কেবল আর্থিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলোই ভবিষ্যতে টেস্ট মর্যাদা ধরে রাখতে পারবে। আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ের মতো সদ্য টেস্ট মর্যাদা পাওয়া দেশগুলোর জন্য এটি বড় ধাক্কা হতে পারে। এমনকি বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো পুরোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোও অবকাঠামো ও বাজারের দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, টেস্ট দলের সংখ্যা সীমিত হলে এই ফরম্যাটটি একটি ‘এলিট ক্লাব’-এর খেলায় পরিণত হবে, যা বিশ্বজুড়ে টেস্ট ক্রিকেটের বিস্তারের পরিবর্তে সংকোচন ঘটাবে।

দ্বিস্তরীয় টেস্ট ক্রিকেট প্রস্তাব

সভায় টেস্ট ক্রিকেটকে দুটি বিভাগে ভাগ করার প্রস্তাবও আলোচিত হয়েছে, যেখানে শক্তিশালী দলগুলো (যেমন ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া) একটি উচ্চতর বিভাগে এবং তুলনামূলকভাবে দুর্বল দলগুলো নিম্ন বিভাগে খেলবে। এই প্রস্তাবে উত্থান-পতনের (প্রমোশন-রেলিগেশন) ব্যবস্থা থাকবে, তবে এটি ২০২৫-২৭ ডব্লিউটিসি চক্রের পরই কার্যকর হতে পারে। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড এই মডেলের সমর্থক, কিন্তু জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট তাওয়েংওয়া মুকুহলানি বলেছেন, “যদি এটি উত্থান-পতনের ভিত্তিতে না হয়, তবে দুটি বিভাগের কোনো অর্থ হয় না।”
টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পুনরাগমন

আইসিসির সভায় টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সালে শুরু হয়ে ২০১৪ সালে বন্ধ হওয়া এই টুর্নামেন্ট ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় ফিরছে। এতে ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), ইংল্যান্ডের দ্য হান্ড্রেড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগের মতো শীর্ষ ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলো অংশ নেবে। তবে, একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলা ক্রিকেটারদের দল নির্বাচন নিয়ে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

অলিম্পিক ও আফগান নারী দলের জন্য সহায়তা
২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্তির জন্য বাছাই পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের পাশাপাশি বাছাই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে দল নির্বাচনের প্রস্তাব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র স্বাগতিক দেশ হিসেবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি স্থান পেতে পারে। এছাড়া, নির্বাসিত আফগান নারী ক্রিকেট দলের জন্য বছরে ১০ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগে আইসিসি, ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড যৌথভাবে কাজ করছে।

ইংল্যান্ডে ডব্লিউটিসি ফাইনালের আয়োজন
আইসিসি ঘোষণা করেছে, ২০২৭, ২০২৯ এবং ২০৩১ সালের ডব্লিউটিসি ফাইনাল ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হবে। ভারত ২০২৭ সালের ফাইনাল আয়োজনের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু ইংল্যান্ডের সফল আয়োজনের রেকর্ডের কারণে এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে।

ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং আর্থিক সম্ভাবনার বিপরীতে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় বাড়ছে। আইসিসির প্রস্তাবিত দ্বিস্তরীয় ব্যবস্থা এবং সীমিত টেস্ট দলের নীতি বাস্তবায়িত হলে ক্রিকেটের ঐতিহ্যবাহী ফরম্যাটটি কেবল ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দেশগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়তে পারে। এই পরিবর্তন ক্রিকেটের বিশ্বব্যাপী বিস্তারের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.