ভারতের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয়
ওভালে ৬ রানের এই জয় ভারতের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড। এর আগে ২০০৪ সালে মুম্বাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৩ রানে জয় ছিল ভারতের সবচেয়ে কম ব্যবধানের জয়। এই জয়ের মাধ্যমে ভারত অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি ২০২৫-এর এই রোমাঞ্চকর সিরিজ জিতে নেয়।
জো রুটের রেকর্ডের হ্যাটট্রিক
ইংল্যান্ডের জো রুট এই সিরিজে একাধিক ব্যক্তিগত রেকর্ড গড়েছেন। তিনি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ৬০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তৃতীয়বারের মতো ৫০০ বা তার বেশি রান করার কীর্তি গড়েন, যা এর আগে কেউ করতে পারেননি। ঘরের মাঠে ২৪টি টেস্ট সেঞ্চুরি করে তিনি রিকি পন্টিং, জ্যাক ক্যালিস ও মাহেলা জয়বর্ধনেকে ছাড়িয়ে যান। ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডে তার রান এখন ২১১১, যা ডন ব্র্যাডম্যানের ২৩৫৪ রানের পর ঘরের মাঠে কোনো এক দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এছাড়া, ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বাধিক ১৩টি টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ডও এখন তার দখলে।
শুভমান গিলের রেকর্ড গড়া ব্যাটিং
ভারতীয় অধিনায়ক শুভমান গিল এই সিরিজে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। তিনি মোট ৭৫৪ রান করে ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজে একক ব্যাটার হিসেবে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন, যা ১৯৯০ সালে গ্রাহাম গুচের ৭৫২ রানের রেকর্ড ভেঙে দেওয়া। এছাড়া, ভারতীয় টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে এক সিরিজে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও গড়েন তিনি, সুনীল গাভাস্কারের ১৯৭৮-৭৯ সালের ৭৩২ রানের রেকর্ড ছাড়িয়ে।
জাদেজা ও রাহুলের অবদান
রবীন্দ্র জাদেজা পাঁচ ম্যাচের ছয় ইনিংসে ৫০ বা তার বেশি রান করেছেন, যা ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজে প্রথম কোনো ব্যাটারের কীর্তি। লোকেশ রাহুলের সঙ্গে মিলে গিল ও জাদেজা এই সিরিজে প্রথমবারের মতো তিন ভারতীয় ব্যাটার হিসেবে ৫০০ বা তার বেশি রান করার রেকর্ড গড়েন।
সিরাজ ও আকাশদীপের বোলিং কীর্তি
মোহাম্মদ সিরাজ ওভাল টেস্টে দুই ইনিংসে ৯ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়েন। তিনি ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম এশিয়ান বোলার হিসেবে অন্তত চারজন ইংলিশ ব্যাটারকে সাতবার করে আউট করেন। আকাশদীপ নৈশপ্রহরী হিসেবে ৬৬ রান করে ভারতের টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় ফিফটির ইনিংসের রেকর্ড গড়েন, যা এর আগে সৈয়দ কিরমানি ও অমিত মিশ্র করেছিলেন।
ডাকেট-ক্রলির ওপেনিং জুটির রেকর্ড
ইংলিশ ওপেনার বেন ডাকেট ও জ্যাক ক্রলি দুই ইনিংসে ৯২ ও ৫০ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন। ভারতের বিপক্ষে তাদের ওপেনিং জুটি মোট নয়বার ৫০+ রানের পার্টনারশিপ করে নতুন রেকর্ড গড়ে, যা ডেসমন্ড হেইনস ও গর্ডন গ্রিনিজের আটবারের রেকর্ড ভেঙে দেয়। এছাড়া, তারা ভারতের বিপক্ষে ১০০০ রান পূর্ণ করা দ্বিতীয় ওপেনিং জুটি হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখায়।
ইংল্যান্ডের নাটকীয় পতন
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে জয় থেকে মাত্র ৪২ রান দূরে থাকাকালীন ৬ উইকেট হারায়, যা টেস্ট ইতিহাসে এত কাছ থেকে এমন ভেঙে পড়ার প্রথম ঘটনা। ওভালে এই ম্যাচে ১২টি এলবিডব্লিউ আউট হয়, যা এই মাঠে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০০০ সালে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে ১৪টি এলবিডব্লিউ ছিল সর্বোচ্চ।
ঐতিহাসিক সিরিজ
ভারত এমন একটি সিরিজ জিতেছে, যেখানে প্রতিটি টেস্টের ফলাফল পঞ্চম দিনে নির্ধারিত হয়েছে। ২০০০ সালের পর এটি চতুর্থ ঘটনা, এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২০০১), দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড (২০০৪-০৫) এবং ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া (২০১৭-১৮) সিরিজে এমনটি দেখা গেছে।
এই সিরিজ ওভাল টেস্টে শুধু জয়ই নয়, বরং ক্রিকেটের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে ভারত। মোহাম্মদ সিরাজের নেতৃত্বে বোলিং ইউনিট এবং গিল, জাদেজা ও রাহুলের ব্যাটিং দক্ষতা এই সিরিজকে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে অবিস্মরণীয় করে তুলেছে।