যৌন নিপীড়নের অভিযোগে রাজশাহীর আলমগীর সুইমিং ক্লাবের কোচ আলমগীর হোসেনকে সাঁতার অঙ্গন থেকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন। এছাড়া, তাকে আলমগীর সুইমিং ক্লাব থেকে বহিষ্কারের জন্য রাজশাহী জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রোববার (২৪ আগস্ট) তদন্ত কমিটির রিপোর্টের আলোকে ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে, ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শাহীন জানিয়েছেন, তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে, এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন ফেডারেশনের সভাপতি।
গত মে মাসে বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতা চলাকালে আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। আলমগীর সুইমিং ক্লাবের সাঁতারুরা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। ঘটনাটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিলে সুইমিং ফেডারেশন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিতে ছিলেন ফেডারেশনের কোষাধ্যক্ষ মেজর (অব.) আতিকুল ইসলাম, সিইও সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং যুগ্ম সম্পাদক নিবেদিতা দাস। প্রায় দুই মাস তদন্তের পর গত ১০ আগস্ট কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দেয়।
তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, কোচ আলমগীর হোসেন সাঁতারু সাধনা আক্তার সুইটিকে বডি ম্যাসেজে প্রলুব্ধ করা, অশ্লীল ভিডিও দেখানো এবং মোবাইলে যৌন উদ্দীপক কথা বলেছেন, যা তার বিকৃত মানসিকতার প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, সাধনা আক্তার সুইটি আলমগীরকে এড়িয়ে চলেননি, বরং তার সঙ্গে মধ্যরাত পর্যন্ত চলাফেরা করেছেন এবং দলের টাকা তার কাছে জমা রেখেছেন। তিনি অডিও ও ভিডিও কলে আপত্তিকর কথা ও ছবি দেখেছেন, যা আলমগীরকে উৎসাহিত করেছে। তদন্তে বাধা সৃষ্টির জন্য আলমগীরকে ‘চুপ থাকেন’ বলে মন্তব্য করায় তাকে সতর্ক করার সুপারিশ করা হয়েছে।
সাঁতারের মান অক্ষুণ্ন রাখতে এবং এ ধরনের ঘটনা রোধে প্রতিযোগিতায় মহিলা সাঁতারু থাকলে দলে একজন মহিলা কোচ বা ম্যানেজার নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবও দিয়েছে কমিটি।
ক্রীড়াঙ্গনে যৌন নিপীড়নের ইতিহাস
ক্রীড়াঙ্গনে যৌন নিপীড়নের ঘটনা নতুন নয়। ২০০৯ সালে কুষ্টিয়ার সাঁতারু আরিফা খাতুন জুনিয়র সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে পাঁচটি স্বর্ণ জিতেছিলেন। তবে, আনসারে চাকরি নেওয়ার পর তার জীবন এলোমেলো হয়ে যায়। ২০১১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি বিষপানে আত্মহত্যা করেন। সতীর্থদের অভিযোগ ছিল, গর্ভবতী হওয়ার কারণে তিনি এই পথ বেছে নিয়েছিলেন। অভিযোগের তির ছিল আনসারের কোচ এমদাদুল হকের দিকে, যিনি পরে নিষিদ্ধ হন।
এছাড়া, বছরকয়েক আগে এক নারী ভারোত্তোলককে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন অফিস সহকারী মো. সোহাগ মিয়া। তবে, কিছুদিন আটক থাকার পর তিনি মুক্তি পান এবং বর্তমানে ভারোত্তোলক হিসেবে কাজ করছেন।
সাম্প্রতিকতম ঘটনা ঘটেছে জুজুৎসুতে। বাংলাদেশ জুজুৎসু অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম নিউটন চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এক তরুণীকে ধর্ষণ করেন। তিনি নাবালিকা নারী খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনৈতিক কার্যকলাপ, গর্ভপাত করানো, পোশাক পরিবর্তনের কক্ষে জোরপূর্বক ধর্ষণ, ভিডিও ধারণ ও ব্ল্যাকমেইলের মতো অপরাধে জড়িত ছিলেন। র্যাব তাকে গ্রেফতার করলেও ৫ আগস্টের পর তিনি মুক্তি পান এবং বর্তমানে ধর্ষিতা তরুণীকে বিয়ে করে সংসার করছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া, ব্যাডমিন্টনে কর্মকর্তা জাহিদুল হক কচি, শুটিংয়ে এক সিনিয়র শুটার এবং ২০০৬ সালে মেলবোর্ন কমনওয়েলথ গেমসে শুটার তৌফিকুল ইসলাম আলোর বিরুদ্ধেও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল। এসব ঘটনা ক্রীড়াঙ্গনে নারী ক্রীড়াবিদদের নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলেছে।