‘যদিও ছবিটি কয়েক বছর আগের, তবু এখনো আমি মুহূর্তটা স্পষ্ট মনে করতে পারি’—নিজের ইনস্টাগ্রাম আইডিতে এই কথাগুলো লিখেছেন আর্জেন্টিনার রোজারিওর আলোকচিত্রী আন্দ্রেস প্রেউমাইর। তিনি যে ছবির কথা বলছেন, সেটি ২০১৭ সালের ৩০ জুন লিওনেল মেসি ও আন্তোনেলা রোকুজ্জোর বিয়ের একটি অনন্য মুহূর্ত। এই ছবিতে মেসি তাঁর স্ত্রী রোকুজ্জোর ঠোঁটে চুমু দিচ্ছেন, আর তাঁদের বড় ছেলে থিয়াগো লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে হাত দিয়ে চোখ ঢেকেছে। এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করে প্রেউমাইর সম্প্রতি জিতেছেন ইন্সপিরেশন ফটোগ্রাফার্স অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার।
ইন্সপিরেশন ফটোগ্রাফার্স অ্যাসোসিয়েশন একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন, যেখানে বিয়ে, পরিবার, প্রতিকৃতি ও প্রামাণ্যচিত্রের আলোকচিত্রী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতারা যুক্ত। মেসির মতো মহাতারকার বিয়ের এই ছবি সবার নজর কাড়ার পাশাপাশি প্রেউমাইরকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। ছবিতে মেসি ও রোকুজ্জোর রোমান্টিক মুহূর্তের পাশাপাশি তাঁদের তৎকালীন ৪ বছর ৭ মাস বয়সী ছেলে থিয়াগোর স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া ধরা পড়েছে। থিয়াগোর লজ্জামাখা অভিব্যক্তি ছবিটিকে আরও অনন্য করে তুলেছে।
প্রেউমাইর ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘ছবিটির যেমন সৌন্দর্য আছে, তেমনি এর পেছনে আছে একটি গল্প। বিয়ের পর সবাই আন্তো ও লিওর চুমুর ছবি তোলার অপেক্ষায় ছিলাম। এ রকম মুহূর্ত কোনো অনুষ্ঠানেই বাদ যায় না। আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম, ঠিক সেভাবেই ঘটল। কিন্তু আসল চমকটা এল এক সেকেন্ড পরেই—থিয়াগোর প্রতিক্রিয়ায়।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘দৃশ্যটা দেখে আমি সঙ্গে সঙ্গে জায়গা বদলাই যেন থিয়াগোকেও ছবিতে যুক্ত করা যায়। মুহূর্তটা একেবারে অনন্য ছিল। সেই সময় আমি বুঝতেই পারিনি ছবিটা ঠিকঠাক তুলতে পেরেছি কি না। ভেতরে ভেতরে ভীষণ উৎকণ্ঠায় ছিলাম। কয়েক ঘণ্টা পরে গিয়ে আমি ছবিটি প্রথমবারের মতো দেখি।’
ছবিটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০২০ সালের ৩০ জুন, মেসি ও রোকুজ্জোর তৃতীয় বিবাহবার্ষিকীতে। সেদিন তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে ছবিটি ছিল। ভিডিওর সঙ্গে তারা লিখেছিলেন, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি। এটাই আমার একমাত্র সত্য। আর আমাদের ভালোবাসা কখনো ফুরাবে না।’ এই ছবি পরে মেসির পারিবারিক অ্যালবামের অংশ হয়ে যায়।
ইন্সপিরেশন ফটোগ্রাফার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৬৯তম আসরে কয়েক শ ছবি বাছাইয়ের পর বিশেষজ্ঞদের ভোটে প্রেউমাইরের এই ছবি পুরস্কৃত হয়। এই পুরস্কার তাঁর ক্যারিয়ারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
মেসি ও রোকুজ্জোর পরিচয় শৈশব থেকে। তাঁদের বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে ভালোবাসায় রূপ নেয়। ১৩ বছর বয়সে মেসি আর্জেন্টিনা ছেড়ে স্পেনের বার্সেলোনায় চলে গেলেও দূরত্ব তাঁদের ভালোবাসায় বাধা হয়নি। ২০১৭ সালের ৩০ জুন রোজারিওর সিটি সেন্টার হোটেল কমপ্লেক্সে তাঁদের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল শহরের সবচেয়ে স্মরণীয় আয়োজনগুলোর একটি। অনুষ্ঠানে ২৬০ জনের বেশি অতিথি, পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব এবং বিশ্বের অনেক তারকা ফুটবলার উপস্থিত ছিলেন। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের আলোকচিত্রী হিসেবে আন্দ্রেস প্রেউমাইরের কাজ তাঁকে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি এনে দিয়েছে।