পাকিস্তানি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফারুক নজর ঘটনাটির একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। ভিডিওতে দেখা যায়, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন কর্মী তাকে পাকিস্তানের জার্সি ঢেকে রাখার অনুরোধ করছেন। কর্মী জানান, আন্তর্জাতিক ম্যাচে শুধুমাত্র অংশগ্রহণকারী দলগুলোর (ভারত ও অস্ট্রেলিয়া) জার্সি পরার অনুমতি রয়েছে, অন্য কোনো দলের জার্সি পরা নিষিদ্ধ। তবে ফারুক এই নির্দেশ মানতে অস্বীকার করেন এবং জার্সি খুলতে বা ঢাকতে রাজি হননি।
ঘটনার পরিণতি
ফারুক নজর পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করেন। ভিডিওতে নিরাপত্তা কর্মী ব্যাখ্যা করেন যে, স্টেডিয়ামের নিয়ম অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারী দলগুলোর বাইরে অন্য কোনো দলের জার্সি পরা যাবে না। ঘটনা আরও জটিল হলে স্থানীয় পুলিশ এবং উচ্চস্তরের নিরাপত্তা কর্মীরা হস্তক্ষেপ করেন। ফারুককে দর্শক সারি থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি, দীর্ঘ আলোচনার পর তাকে পাকিস্তানের জার্সি পরেই ম্যাচ দেখার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে নিরাপত্তা কর্মীদের আচরণ ও কথাবার্তার ধরণ নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে তুমুল আলোচনা
ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে নিরাপত্তা কর্মীদের এই পদক্ষেপকে বৈষম্যমূলক বলে সমালোচনা করেছেন। পাকিস্তানি ক্রিকেট ভক্তরা এটিকে ক্রীড়াঙ্গনে রাজনৈতিক প্রভাব হিসেবে দেখছেন। একজন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ক্রিকেট ভক্ত হিসেবে স্টেডিয়ামে যাওয়ার অধিকার সবার। জার্সি পরার জন্য কাউকে বৈষম্যের শিকার করা ঠিক নয়।” অপরদিকে, কেউ কেউ বলেছেন, স্টেডিয়ামের নিয়ম মেনে চলা উচিত। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ভারত-পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রেক্ষাপটে এই নিয়ম যুক্তিযুক্ত।”
ল্যাঙ্কাশায়ারের তদন্ত
ল্যাঙ্কাশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব, যারা ওল্ড ট্রাফোর্ডকে হোম ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করে, ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে। তারা এক বিবৃতিতে জানায়, “আমরা ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে পেরেছি এবং এর পেছনের তথ্য ও প্রেক্ষাপট বোঝার জন্য তদন্ত করছি।” স্টেডিয়ামের নিয়ম অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক ম্যাচে শুধুমাত্র অংশগ্রহণকারী দলগুলোর জার্সি বা সামগ্রী ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।
প্রেক্ষাপট ও বিতর্ক
এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে আরও জটিল হয়েছে। সম্প্রতি পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলা এবং ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এর আগে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অফ লিজেন্ডসে ভারত ও পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন্সের ম্যাচ বাতিল হয়েছিল এই কারণে।
ফারুক নজর জানিয়েছেন, তিনি ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, “আমি একজন ক্রিকেট ভক্ত হিসেবে ম্যাচ দেখতে এসেছিলাম। আমার জার্সি নিয়ে কোনো দর্শক অভিযোগ করেননি, তবু আমাকে এভাবে বৈষম্যের শিকার হতে হলো।”
এই ঘটনা ক্রিকেটের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। ক্রিকেটের মাঠে সবাইকে স্বাগত জানানো উচিত বলে অনেকে মনে করেন, যিনিই তিনি হোন বা যে দেশের জার্সিই পরুন।