সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫

লুকা মদরিচের প্রস্থানে ব্যালন ডি’অরশূন্য রিয়াল মাদ্রিদ: আড়াই দশকের ইতিহাসে প্রথম

 
চলতি মাসে ক্লাব বিশ্বকাপ খেলে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে এসি মিলানে যোগ দিয়েছেন ক্রোয়াট কিংবদন্তি লুকা মদরিচ। তাঁর প্রস্থানে শুধু ক্লাবের ড্রেসিংরুমই নয়, রিয়াল সমর্থকদের হৃদয়ও শূন্য হয়ে গেছে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়ালের ট্রফি কেবিনেটে ২৮টি শিরোপায় মদরিচের অবদান অসামান্য। তাঁর ব্যক্তিগত ট্রফি কেবিনেটও সমৃদ্ধ। ২০১৮ সালে রিয়ালে থাকতেই জিতেছিলেন ব্যালন ডি’অর। কিন্তু তাঁর চলে যাওয়ার সঙ্গে রিয়ালে এখন আর কোনো ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড় নেই।

চলতি শতাব্দীর প্রথম চতুর্থাংশে, অর্থাত গত ২৫ বছরে এমন ঘটনা কখনো দেখা যায়নি। গত ২৫ বছরে রিয়ালের স্কোয়াডে সব সময় অন্তত একজন ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড় ছিলেন। মদরিচের প্রস্থানের মধ্য দিয়ে আড়াই দশক পর প্রথমবারের মতো ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়শূন্য হয়ে পড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। এই সময়ে আটজন ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড় ক্লাবটির ড্রেসিংরুমে পা রেখেছিলেন।

ব্যালন ডি’অর পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯৫৬ সালে। সেবার এই সম্মান জিতেছিলেন ব্ল্যাকপুলের ইংরেজ কিংবদন্তি স্ট্যানলি ম্যাথুজ। এরপর টানা তিন বছর রিয়ালের ঘরে উঠেছিল এই ট্রফি। ১৯৫৭ ও ১৯৫৯ সালে জিতেছিলেন কিংবদন্তি আলফ্রেদো ডি স্টেফানো এবং ১৯৫৮ সালে জিতেছিলেন ফরাসি কিংবদন্তি রেমন্ড কোপা। এরপর অবিশ্বাস্যভাবে চার দশকেরও বেশি সময় রিয়ালে কোনো ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড় দেখা যায়নি।

২০০০ সালে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ ক্লাবটির সভাপতি হওয়ার পর ‘গ্যালাকটিকোস’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের দলে ভিড়িয়ে রিয়ালের স্কোয়াডকে শক্তিশালী করার এই নীতির ফলেই ২০০০ সালে জুলাইয়ে দলে যোগ দেন পর্তুগিজ কিংবদন্তি লুইস ফিগো। সে বছরই (১৯ ডিসেম্বর) ব্যালন ডি’অর জিতে নেন ফিগো, এবং শুরু হয় রিয়ালের টানা ২৫ বছরের ধারা—যেখানে তাদের ড্রেসিংরুমে সব সময় অন্তত একজন ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড় ছিলেন।

ফিগোর পর ২০০১ সালে রিয়ালে যোগ দেন জিনেদিন জিদান, যিনি ১৯৯৮ সালে ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন। ২০০২ সালে দলে আসেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিও, যিনি ১৯৯৭ ও ২০০২ সালে এই পুরস্কার জিতেছিলেন। ২০০৪-০৫ মৌসুমে রিয়ালের স্কোয়াডে চারজন ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড় ছিলেন—ফিগো, জিদান, রোনালদো এবং মাইকেল ওয়েন। ফিগো ও ওয়েন ২০০৫ সালে এবং রোনালদো ২০০৭ সালে রিয়াল ছাড়েন। তবে এর মধ্যেই ২০০৬ সালে দলে ভিড়ানো হয় ইতালির বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ফাবিও কানাভারোকে, যিনি সে বছরই ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন।

কানাভারো ২০০৯ সালে রিয়াল ছাড়ার পর সে বছরই দলে যোগ দেন ২০০৭ সালের ব্যালন ডি’অরজয়ী কাকা এবং ২০০৮ সালের জয়ী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। একই বছর দলে আসেন ২০২২ সালে ব্যালন ডি’অর জিতে নেওয়া করিম বেনজেমা। রোনালদো এরপর ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন। ২০১৮ সালে রোনালদো রিয়াল ছাড়লেও সে বছরই মদরিচ ব্যালন ডি’অর জিতে ক্লাবের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখেন। বেনজেমা ২০২২ সালে এই পুরস্কার জিতলেও ২০২৩ সালে তিনি রিয়াল ছাড়েন। এরপর মদরিচই ছিলেন ক্লাবের একমাত্র ব্যালন ডি’অরজয়ী। তাঁর প্রস্থানে এই ধারা ভেঙে গেছে।

তবে ভবিষ্যত নিয়ে আশার ইঙ্গিত রয়েছে। গত বছর ব্যালন ডি’অর জয়ে ম্যানচেস্টার সিটির রদ্রির কাছে দ্বিতীয় স্থানে থেকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল রিয়ালের উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে। যদিও চলতি বছর ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে রিয়ালের খেলোয়াড়েরা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন। তবু নতুন কোচ জাবি আলোনসোর অধীনে এই খরা ঘুচিয়ে ফেলবে রিয়াল—এমনটাই আশা করছেন সমর্থকরা।


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.