খেলাধুলাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য অ্যাথলেটিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুনে স্পেনের গ্রান ক্যানারিয়ার একটি বিচ ক্লাবে এই ঘটনা ঘটে। রিয়াল মাদ্রিদের যুব দলের সাবেক দুই খেলোয়াড় এক অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে ও এক তরুণীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন এবং তাঁদের অজান্তে সেই দৃশ্য গোপনে ভিডিও ধারণ করেন। আসেনসিও ওই ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন না, তবে তিনি ভিডিওটি চেয়ে নিয়ে দেখেন এবং পরে আরেক বন্ধুকে শেয়ার করেন। স্পেনের ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৭৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এটি গোপনীয়তা লঙ্ঘনের দুটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, এই ঘটনার পর ওই অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে ও তরুণী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হন। তাঁদের প্রত্যেককে ৫ হাজার ইউরো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্যও আবেদন করা হয়েছে। কানারি দ্বীপপুঞ্জের হাইকোর্ট গত মে মাসে এই চার খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার নির্দেশ দেন। পুলিশ জানিয়েছে, ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীর মা এই অভিযোগ দায়ের করেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে ভিডিওটি রেকর্ড করার জন্য কোনো অনুমতি ছিল না।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আসেনসিও ও তাঁর তিন সাবেক সতীর্থ আন্দ্রেস গার্সিয়া, ফেরান রুইজ এবং হুয়ান রদ্রিগেজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তাঁদের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। রিয়াল মাদ্রিদ তখন নিশ্চিত করেছিল যে, ‘হোয়াটসঅ্যাপে ব্যক্তিগত ভিডিও শেয়ার করার’ প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে আসেনসিওর আইনজীবী তদন্ত বন্ধের জন্য আবেদন করলেও আদালত তা খারিজ করে দেন।
এক্স-এ প্রকাশিত পোস্ট অনুযায়ী, স্পেনের প্রসিকিউটররা আসেনসিওর বিরুদ্ধে ৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫৮ হাজার ইউরো ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছিলেন। তবে, জুলাই মাসে আসেনসিও ও তাঁর আইনজীবী ভুক্তভোগীদের সঙ্গে একটি সমঝোতার চুক্তিতে পৌঁছান, যার ফলে তাঁর দায় কিছুটা হ্রাস পায়। এই চুক্তির অংশ হিসেবে আসেনসিও অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন, যা একটি ‘কনফর্মিটি কনডেমনেশন’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
আসেনসিও এই অভিযোগের জবাবে এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমি কোনো নারীর যৌন স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে এমন কোনো আচরণে লিপ্ত হইনি, অপ্রাপ্তবয়স্ক তো দূরের কথা।” তবে, তদন্তে শিশু পর্নোগ্রাফি রাখার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
২২ বছর বয়সী এই ফুটবলার ২০২৪-২৫ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে নিয়মিত খেলছেন। গত মৌসুমে তিনি ৫৭টি ম্যাচ খেলেন এবং ২০২৫ সালের মার্চে স্পেন জাতীয় দলে প্রথমবারের মতো ডাক পান। গত জুনে তিনি রিয়ালের সঙ্গে ২০৩১ সাল পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করেন। তবে, এই মামলার কারণে তিনি মাঠের বাইরে গালিগালাজ ও অপমানসূচক স্লোগানের শিকার হয়েছেন।
রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক কোচ কার্লো আনচেলোত্তি ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, তিনি এই স্লোগানের কারণে আসেনসিওকে মাঠের বাইরে রাখবেন না। ক্লাবের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে সর্বশেষ কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এই মামলার পরবর্তী শুনানি এখনো নির্ধারিত হয়নি, তবে এটি ফুটবল বিশ্বে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।